দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে মুহূর্তেই প্রয়োজনীয় সব ধরনের নাগরিক সেবা গ্রহণ করতে পারছেন সাধারণ মানুষ। কমেছে সময় ও ভোগান্তি। জীবনমান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে কর্মসংস্থান। প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার চেয়ে বিকাশ, রকেট, নগদ ইত্যাদি এখন দেশের সাধারণ মানুষের কাছে অধিক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। নগদ টাকা উত্তোলন ও জমা দেয়ার ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্যের হয়ে উঠছে এটিএম বুথ। প্রথাগত ব্যাংক থেকে ইন্টারনেট ব্যাংকিং, পেশাদারিত্বের ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং, টেলিকনফারেন্স, ই-ফাইলিং, ই-ট্র্যাকিং, ব্যবসায়ে ই-কমার্স থেকে শুরু করে ঘরের-অফিসের নিরাপত্তা, পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত সিসি ক্যামেরাটি এখন আর ইন্টারনেট সংযোগের বাইরে থাকছে না। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে চিকিৎসা, অর্থনীতি, রাজনীতি, নিরাপত্তা, সংস্কৃতিসহ প্রতিটি মৌলিক ক্ষেত্রেই যুগান্তকারী বিপ্লব এনে দিয়েছে। দেশের মানুষের জীবনকে করছে গতিময়। জীবনের পরতে পরতে এনে দিচ্ছে স্বাচ্ছন্দ্য ও সমৃদ্ধি। এ যেন তথ্য-প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া এক নতুন বাংলাদেশ। অথচ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ২০০৭ সালেও বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ ছিল সম্ভাবনাহীন একটি দেশ।
ডিজিটাল সরকার, নাগরিকদের ডিজিটাল সেবা প্রদান, তথ্য ও প্রযুক্তিভিত্তিক মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিল্প প্রসার- এ চারটি মূল লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনার সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ভিশনের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। মূলত প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষের জীবনমান উন্নত করাই ছিল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ভিশনের মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে স্থাপিত হয় একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম।
আউটসোর্সিং খাতকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিতে সরকার ফ্রিল্যান্সারদের জন্য দ্রুতগতিসম্পন্ন বিশেষ ইন্টারনেট সেবা দেয়ার পরিকল্পনা করছে। এ খাতে উৎসাহ বাড়াতে সরকার প্রতি বছর আন্তর্জাতিক বিপিও সম্মেলন আয়োজন করছে। এ ছাড়া সরকার ৫০০ বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। বাংলাদেশে বিশ্বমানের তথ্য ও প্রযুক্তি অবকাঠামো, সুবিধা ও সেবা নিশ্চিত করতে সরকার ক্রমান্বয়ে প্রতিটি জেলায় হাইটেক পার্ক, আইটি পার্ক এবং সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ৩৫৫ একর জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম হাই-টেক পার্ক। এই হাই-টেক পার্কের নির্মাণ কাজ শেষ হলে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ১০ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি হবে। এর ফলে দেশে বেকারত্ব কমে আসবে। সীমাহীন আত্মবিশ্বাস আর বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশের নতুন পরিচয় নির্মাণ করেছিলেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তারই সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়াবে, সেদিন বেশি দূরে নয়।